,

হবিগঞ্জে দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা

ভর্তি সংক্রান্ত কিছু অপূরণীয় কাগজপত্রে নেয়া হয় স্বাক্ষর

জাবেদ তালুকদার : হবিগঞ্জের প্রাইভেট হাসপাতাল-কিনিকগুলোর চিকিৎসাসেবা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে বাড়তি টাকা আদায় ও ভুল রিপোর্ট দেয়ার মতো অভিযোগ নিয়মিতই উঠে।
গত শনিবার (১ অক্টোবর) দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সিজারের সময় পেটের ভেতরে থাকা নবজাতকের মাথা কেটে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে ডাঃ উম্মে কাসমিরা জাহানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত সোমবার (১০ অক্টোবর) ভূক্তভোগী বানিয়াচং উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের সাবেক ২ বারের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগের বিষয়টিকে মিথ্যা দাবী করে বলছে- প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ২ দিন আগেই গর্ভের শিশুটি মারা যায়। তাই মৃত শিশু সিজার করতে গিয়ে চামড়া ফেটে গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- শনিবার (১ অক্টোবর) রাত আড়াইটার দিকে হাবিবুর রহমান তার স্ত্রী ফেরদৌস বেগম (৩১) এর প্রসব ব্যাথা নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে আসলে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক জরুরীভাবে সিজারের পরামর্শ দেন। এ সময় জেলা শহরের কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে তিনি বন্ধ পেয়ে অবশেষে তার স্ত্রীকে নিয়ে হবিগঞ্জ নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেন এবং তার রোগীর জন্য এই হাসপাতালটি নিরাপদ এবং উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান এবং তার কাছে থাকা লোকজন তাকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন এবং বলেন ডাঃ উম্মে কাসমিরা জাহান খুব ভাল একজন ডাক্তার তিনি নরমাল ডেলিভারীর চেষ্টা করবেন, প্রয়োজনে আপনার সাথে কথা বলে সিজার করবেন। তখন হাসপাতালটির চেয়ারম্যানের উপর আস্থা রেখে তাৎক্ষনিক হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে তার স্ত্রীকে ভর্তি করেন। ভর্তি করার পরপরই ভর্তি সংক্রান্ত কিছু অপূরণীয় কাগজপত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর নেয়। রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে সার্জনের সাথে কথা বলতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায় তিনি পর্দা করেন বিধায় কোন পুরুষ লোকের সাথে কথা বলবেন না। পরে রোগীর বোন ভেতরে প্রবেশ করলে ডাঃ উম্মে কাসমিরা জাহান বলেন আমি রোগীকে দেখছি কি করা যায়। এর কিছুক্ষন পর হাসপাতালের নার্সরা কয়েকটি সাদা কাগজে বারবার হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু তিনি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন নি। পরে হাসপাতালের লোকজন একটি ব্যাগে ফার্মেসী থেকে কিছু ঔষধ নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে চলে যায়। হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা জানান অপারেশন হলে আপনাকে জানিয়েই করা হবে। কিছুক্ষণ পর নার্স এসে তাকে ভেতরে যেতে বলেন, তিনি ভেতরে গিয়ে দেখেন তার মৃত বাচ্চাকে অপারেশন করে ফেলে রেখেছে এবং মাথার ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তখন হাবিবুর রহমান বুঝতে পারেন ডাঃ উম্মে কাসমিরা জাহান ও তার সঙ্গীরা অদক্ষতা, ভূল চিকিৎসা ও সিজারের মাধ্যমে তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। তখন তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেন- ’আপনারা আমাকে না বলে আলট্রাসনোগ্রাম না করে ব্লাড টেস্টের টাকা নিলেন এবং ব্লাড গ্রুপ না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে অপারেশন করে ফেললেন।’ তখন কর্তৃপক্ষ তাকে বলেন আল্লাহ নিয়ে গেছেন, ছবর করেন।’ পরদিন বাচ্চার দাফন কার্যে ব্যাস্ত থাকায় ডাক্তারের সাথে যোগাযাগ করতে পারেননি। গত সোমবার (৩ অক্টোবর) সকালে হাবিবুর রহমানের স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হওয়াতে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাক্তার আছেন কি না জিজ্ঞেস করলে? তারা জনায় কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসবেন। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় ’তিনি পর্দাশীল হওয়ায় কথা বলতে পারবেন না। তখন হাবিবুর রহমান বলেন- আমার কাছ থেকে টেস্ট ও ভর্তির জন্য ২ হাজার ৯ শত টাকা নিলেন কিন্তু রশিদ বা টেস্ট রিপোর্ট কিছুই তো দিলেন না, তখন তারা বলে যাওয়ার সময় দিয়ে দিবে এবং হাবিবুর রহমানের সাথে দূর্ব্যাবহার করেন। কিছুক্ষণ পর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে হাবিবুর রহমান হাসপাতালের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমানকে খারাপ দূর্ব্যাবহারের বিষয়টি অবগত করেন এবং বলেন ’আলট্রাসোনগ্রাম ছাড়া কীভাবে সিজার হয়? তখন হাবিবুর রহমান তার স্ত্রীর ফাইল দেখতে চাইলে তারা ফাইলের ভিতর অন্য এক রোগীর রিপোর্ট দেখায় এবং টেস্টের রিপোর্টে কোন ডা. এর স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। হাবিবুর রহমান মৃত বাচ্ছার ছবি দেখিয়ে মাথায় কাটা/ছেড়া থাকার কথা এবং হাত পায়ের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে বাচ্চা দু’দিন আগেই মারা গেছে। তখন হাবিবুর রহমান বলেন- যদি জানেনই বাচ্চা দুদিন আগে মারা গেছে, তাহলে আমাকে না বলেই কেন অপারেশন করেন? তখন হাসপাতালের চেয়ারম্যান কোন সদোত্তর না দিয়ে তার রোগীকে রিলিজ দিয়ে দেন। পরে হাবিবুর রহমান তার স্ত্রীকে আশংকাজনক অবস্থায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ব্যাপারে দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফের সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়টিকে মিথ্যা দাবী করে বলেন, ‘রোগীকে নিয়ে আসার অন্তত দুইদিন আগেই শিশুটি মারা গিয়েছিল। আমাদের এখানে কোন ভূল চিকিৎসা হয়নি। শিশুটি দুইদিন আগে মারা যাওয়ায় তার শরীর অনেক নরম হয়ে গেছিল। যে কারণে সিজারের সময় মাথায় একটু ফেটে যায়।’
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নূরুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর